৭ টি লক্ষণ দেখে চিনুন জাল দলিল ও করণীয় পন্থা

বর্তমান সময়ে জমি ক্রয়/বিক্রয়ের জন্য ভুয়া দালালের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যে বিষয়গুলো খেয়াল না রাখলে জমি ক্রয়/বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের ভুগান্তিতে পড়তে হতে পারে। আজ আমরা আলোচনা করব, কিভাবে আপনি জাল/ভুয়া দলিল চিনতে পারবেন। জাল দলিল ও করণীয়

জাল দলিল ও করণীয় গুলো কি কি : 

১. দলিলি ভলিউডেমর তথ্য যাচাই: সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউম আছে। আপনার জমি বিষয়ে কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাল মিলিয়ে দেখতে পারেন। এটির জন্য আপনাকে নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এখানে আপনার জমির দলিলটির বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।

২. দলিলের স্বাক্ষর যাচাই: অনেক সময় দেখা যায় দলিলের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়, এত করে দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজাও হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে- স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করে নিবেন। 

এছাড়াও ভূমি অফিস থেকে দলিলের বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি নির্ণয় করা সম্ভব। স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যক্তি, তারিখ ও দলির সিল ঠিক আছে কি না দেখতে হবে।


৩. মূল মালিক নামে দলিল শনাক্ত: একটি জমির দলিলে একাধিক মালিকের নামে করা থাকলে, আপনি ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে। এই জন্য সরেজমিনে থেকে/ গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে জমিটির বিষয়ে কথা বলে মূল মালিক কে, তা নির্ণয় করতে হবে।

৪. সঠিক নামজারি যাচাই: আপনাকে অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রি থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। দলিলের নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, সেটা গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো মিল নেই, তাহলে বুঝতে হবে, এই দলিলে জটিলতা আছে।

এখানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, জমির জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার ক্রয়/ বিক্রি হয়েছে কি-না, সেই জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা সাথে দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না, এসব অবশ্যই যাচাই করতে হবে।

৫. জমির দলিলের আমমোক্তারনামা: সম্প্রতি সময়ে জমির দলিলে কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি আছে কি না যাচাই করতে দেখতে হবে।

৬. দলিলের তারিখ যাচাই করুন: জমিটা যদি দানকৃত হয়, সেক্ষেত্রে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করুন। জমিদাতা ও সাথে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, সেটা জানুন।

৭. দলিলের মহুরি/ দলিল যাচাই: লেখক যাচাই:দলিলের লেখক কে? দলিলটি বিষয়ে দলিল লেখকের সরেজমিন খোজ খবর নিন।

  • জাল দলিল হলো এমন একটি দলিল যা আইনত বৈধ নয়। এটি প্রতারণার মাধ্যমে তৈরি করা হয় এবং এতে কোনো সম্পত্তি বা অধিকারের হস্তান্তরের বিষয় উল্লেখ থাকে। জাল দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা হারানো, আইনি জটিলতায় জড়ানো, এমনকি কারাদণ্ডেরও সম্মুখীন হতে হয়।
  • জাল দলিল সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জাল দলিল সম্পর্কে সন্দেহ হলে তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। দলিলটি যদি ভুয়া প্রমাণিত হয় তবে তা বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। এছাড়াও, জাল দলিল তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যেতে পারে।


জাল দলিল ও করণীয়: এমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

জাল দলিলের কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য কী কী?

উত্তর:

  • ভুল বানান ও ব্যাকরণ: জাল দলিলে প্রায়ই ভুল বানান ও ব্যাকরণের ত্রুটি দেখা যায়।
  • অস্পষ্ট তথ্য: দলিলের তথ্য অস্পষ্ট, অসম্পূর্ণ, অথবা পরস্পরবিরোধী হতে পারে।
  • জাল স্বাক্ষর: স্বাক্ষর মূল ব্যক্তির সাথে মেলে না, অথবা স্বাক্ষরের ধরণে অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
  • জাল সিল: সিল অস্পষ্ট, ভুয়া, অথবা আসল সিলের সাথে মেলে না।
  • কাগজের মান: কাগজের মান নিম্নমানের, অথবা পুরনো দলিলের ক্ষেত্রে কাগজ অস্বাভাবিকভাবে নতুন দেখায়।
  • সংশোধন: দলিলে অসংখ্য সংশোধন ও কাটাছেঁড়া দেখা যায়।
  • অনুপস্থিত তথ্য: দলিলে প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন সাক্ষীর স্বাক্ষর, তারিখ, ইত্যাদি অনুপস্থিত থাকে।

জাল দলিল সন্দেহ করলে কী করবেন?

উত্তর:

  • দলিল যাচাই: একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিন এবং দলিলের সত্যতা যাচাই করুন।
  • আইনি পদক্ষেপ: জাল দলিল প্রমাণিত হলে, দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
  • প্রমাণ সংগ্রহ: জাল দলিলের প্রমাণ সংগ্রহ করুন, যেমন মূল দলিলের সাথে তুলনা, সাক্ষীর সাক্ষ্য, ইত্যাদি।
  • অভিযোগ দায়ের: থানায় অভিযোগ দায়ের করুন এবং জালিয়াতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • সতর্কতা অবলম্বন: ভবিষ্যতে জালিয়াতির শিকার হওয়া থেকে সাবধান থাকুন এবং সম্পত্তি লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন।

জাল দলিলের শাস্তি কী?

উত্তর:

বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারা অনুযায়ী, জাল দলিল তৈরি বা ব্যবহারের শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

জাল দলিলের শিকার হলে কী করবেন?

উত্তর: জাল দলিলের শিকার হলে:

  • আইনি সহায়তা নিন: দ্রুত একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।
  • প্রমাণ সংগ্রহ করুন: জাল দলিলের প্রমাণ সংগ্রহ করুন, যেমন দলিলের মূল কপি, স্বাক্ষরের নমুনা, ইত্যাদি।
  • পুলিশে অভিযোগ করুন: জাল দলিলের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করুন।

জাল দলিল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কী করবেন?

উত্তর: জাল দলিল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য:

  • দলিলের সত্যতা যাচাই করুন: দলিলের সত্যতা যাচাই করার জন্য একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন।
  • স্বাক্ষর করার আগে দলিল পড়ুন: দলিলে স্বাক্ষর করার আগে পুরোপুরি পড়ুন এবং বুঝুন।
  • বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দলিল কিনুন: বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দলিল কিনুন।

জাল দলিলের জন্য কী শাস্তি হতে পারে?

উত্তর: জাল দলিলের জন্য কারাদণ্ড, জরিমানা, বা উভয়ই হতে পারে।


জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কত সময় আছে?

উত্তর: জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ৩ বছরের সময় আছে।


জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কোন আদালতে যেতে হবে?

উত্তর: জাল দলিলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দেওয়ানি আদালতে যেতে হবে।

উল্লেখ্য: এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। আইনি পরামর্শের জন্য একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url